নিউজ ডেস্ক :: বাংলাদেশ আজ এমন এক ভয়াবহ বাস্তবতার মুখে দাঁড়িয়ে, যেখানে দলীয় সীমারেখা পেরিয়ে মানুষকে মানুষ হিসেবে ভাবা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। রুটি, নিরাপত্তা, বিচার ও মর্যাদা এই চারটি মৌলিক অধিকার আজ নাগরিক জীবনে এক প্রকার বিলাসে পরিণত হয়েছে। তাই রাজপথে নামার আহ্বান এখন কোনো দলের নয় এটি মানবিক দায়বদ্ধতার আহ্বান, এটি বেঁচে থাকার সংগ্রাম।
বাজারে গেলেই বোঝা যায় দ্রব্যমূল্যের আগুনে সাধারণ মানুষের জীবন পুড়ে যাচ্ছে নিঃশব্দে। চাল, তেল, ডাল, সবজি সবকিছুর দাম যেন প্রতিদিন নতুন উচ্চতায় উঠছে। মধ্যবিত্তের সংসার চালানো আজ মরিয়া লড়াই, নিম্নবিত্তের পক্ষে একবেলা খাওয়া-ও অনিশ্চিত। এই মূল্যবৃদ্ধি শুধু অর্থনৈতিক সংকট নয়, এটি একটি নৈতিক বিপর্যয়, যা সমাজের ভারসাম্য নষ্ট করে দিচ্ছে।
কিন্তু সংকট এখানেই থেমে নেই। চাঁদাবাজি, জমি দখল, মামলা-বাণিজ্য এবং প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। এখন আর আদালতে ন্যায়বিচার পাওয়া যায় না, বরং ‘মূল্যবিচার’-এর এক বিকৃত সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। টাকা ছাড়া আইন চলে না, ন্যায়বিচার মেলে না। এই অবস্থা রাষ্ট্র ও সমাজ উভয়েরই প্রতি মানুষের আস্থা ধ্বংস করছে।
নদী ও খালে ভেসে থাকা অজ্ঞাত লাশ এখন প্রায় নিয়মিত সংবাদ। নারী ও শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে; রাতে ঘুমানো মানেই ভয়। জেলখানায় নির্যাতন, মিথ্যা মামলা, গুম—সবকিছু মিলিয়ে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা আজ এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। অথচ কোথাও কোনো জবাবদিহি নেই, নেই কোনো বিবেকবান কণ্ঠস্বর।
এই অন্ধকার বাস্তবতায় মানুষ যদি রাজপথে নামে, সেটি কোনো দলের আহ্বানে নয় এটি বাঁচার তাগিদে, মানবতার দায়ে। এই আন্দোলন হবে দলীয় নয়, জনগণের। শিক্ষক, শ্রমিক, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসক সব শ্রেণির মানুষকে যুক্ত হতে হবে এই নাগরিক জাগরণে। কারণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো কোনো রাজনীতি নয়, এটি দায়িত্ব, এটি বিবেকের আহ্বান।
দাবিগুলোও স্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত
১️⃣ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ
২️⃣ চাঁদাবাজি, দখল ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
৩️⃣ মামলা-বাণিজ্য রোধে বিচারব্যবস্থার সংস্কার
৪️⃣ প্রশাসনিক জবাবদিহিতা ও দুর্নীতির দমন
৫️⃣ নির্যাতিত পরিবারের পুনর্বাসন ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ
এই দাবিগুলো কোনো দলের ইশতেহার নয় এগুলো বেঁচে থাকার মৌলিক শর্ত। তাই আন্দোলন হবে অহিংস, সংগঠিত ও নীতিনিষ্ঠ। যুক্তি, নীতি ও ন্যায়বোধই হবে এই লড়াইয়ের মূল অস্ত্র।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় মানবিক আন্দোলনই দীর্ঘস্থায়ী হয়, আর জনগণের আন্দোলনই পরিবর্তনের সূচনা করে। তাই আজ প্রশ্ন একটাই আমরা কি দর্শক হয়ে থাকব, নাকি জেগে উঠব নাগরিক হিসেবে?
রাজপথে নামতে হবে দলীয় পতাকা নয়, মানবতার পতাকা হাতে।
এটাই বাঁচার লড়াই, মর্যাদার লড়াই, ন্যায়ের লড়াই যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপই আগামী প্রজন্মের জন্য এক নতুন ভোরের প্রতিশ্রুতি।