সাউথ এশীয় নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘অনেক প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যাপ্ত সহায়তা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে। দীর্ঘসূত্রতার কারণে বহু ব্যবসা কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হতে পারে।’ তিনি মনে করেন, অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকৃত ঋণগ্রহীতাদের সময়মতো সহায়তা দেওয়া জরুরি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অতীতে ঋণ পুনঃ তফসিল অনেক সময় রাজনৈতিক কারণে অনুমোদিত হয়েছিল। এর ফলে বর্তমান সংকটে প্রকৃত ঋণগ্রহীতারা অসুবিধায় পড়েছেন।এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্যই কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিপুল আবেদন ও জটিলতা থাকায় সময় লাগছে। তবে প্রক্রিয়া দ্রুত করার চেষ্টা চলছে এবং যোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো শিগগিরই সমাধান পাবে।’ কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর, শিল্প পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এক বছরে সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে ৫ শতাধিক কারখানা বন্ধ ও রুগ্ণ হয়েছে। বন্ধ কারখাআর ১ লাখ ১৯ হাজার ৮৪২ শ্রমিক বেকার হয়েছেন। তাঁদের অনেকে চাকরির জন্য ছুটতে ছুটতে শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে গ্রামে ফিরেছেন। বন্ধ কারখানার বেশির ভাগই তৈরি পোশাক, নিটওয়্যার ও টেক্সটাইলশিল্পের। শিল্প মালিকরা বলছেন, ঋণ পুনঃ তফসিলে ধীরগতি পাশাপাশি উচ্চসুদ, কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার ছাড়াও কাঁচামাল আমদানিতে এলসি সমস্যা, শিল্পে অব্যাহত গ্যাস সংকট, দফায় দফায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়া, অব্যাহতভাবে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচে অনেকে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না। তাঁরা চরম সংকটের কারণেই কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনিয়ন্ত্রিত এ পরিস্থিতিতে খেলাপি হওয়া প্রতিষ্ঠানের ঋণ পুনঃ তফসিল প্রক্রিয়ায় ধীরগতির কারণে খেলাপি ঋণ বেড়েছে অস্বাভাবিক গতিতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। যা ব্যাংক খাতের বিতরণ করা মোট ঋণের প্রায় ২৭ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর দেওয়া প্রতি চার টাকার মধ্যে এক টাকারও বেশি এখন খেলাপি হয়ে গেছে।এর আগে চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। তখন খেলাপি ঋণের হার ছিল ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
এ ছাড়া ২০২৪ সালের জুনে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে এই অঙ্ক বেড়ে হয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৭ কোটি টাকা।